স্নিগ্ধ চা ফুল

বছর কয়েক আগে চা বাগানে গিয়ে প্রথম চা-ফুল দেখি। মৌলভীবাজারের চা বাগান এলাকায় তখন শুধুই পুষ্পোৎসব। বাগানের পর বাগানজুড়ে খই ফুটেছে যেন। তবে চা বাগানে সবসময় আর্থিক লাভালাভের জন্য পাতাটাই মুখ্য, ফুল নয়। এ কারণে ফুলের সৌন্দর্য অনেকটাই উপেক্ষিত।

ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক তাতে কারো কোনো ভাবান্তর নেই; কিন্তু প্রকৃতির আপন নিয়মে প্রতি বছরই ফুল ফোটে, ফল ধরে। মানুষ সেই সৌন্দর্য উপভোগ করল, কি করল না তাতে তার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।   

বাগানে সাধারণত আমরা চা গাছের (Camellia sinensis) সমান্তরাল যে রূপটা দেখি তা অনেকটা নিয়ন্ত্রিত। অর্থাৎ ওদের ইচ্ছেমতো বাড়তে দেওয়া হয় না। পাতা সংগ্রহের সুবিধার্থেই এমন ব্যবস্থা। আদতে চা গাছ আরও বড় হয়। গাছ চিরসবুজ, উচ্চতা প্রায় ২ মিটার বা আরও বেশি, দেখতে গুল্ম বা ছোট গাছের মতো। পাতা ৪ থেকে ১৫ সেমি লম্বা হতে পারে, কিনারা ঈষৎ রোমশ। প্রতি এক বা দুই সপ্তাহ পর পর চায়ের জন্য কাঁচা সবুজ রঙের কচিপাতা সংগ্রহ করা হয়। এ ধরনের পাতায় শতকরা ৪ ভাগ ক্যাফেইন পাওয়া যায়। ফুল সাদা, একটু মোড়ানো ধরনের কয়েকটি পাপড়ি, মাঝখানে একগুচ্ছ হলুদ-সোনালি রঙের পরাগ কেশর। গড়নের দিক থেকে অনেকটা নাগেশ্বরের মতো। 

চা ক্যামেলিয়া প্রজাতির গাছ। সারাবিশ্বে ফুল হিসেবে ক্যামেলিয়া যেমন নন্দিত, তেমনি চা-ও সুখ্যাত। শুধু তাপমাত্রার কারণেই আমাদের দেশে ক্যামেলিয়া খুব একটা দেখা যায় না। বিশ্বে তিন ধরনের চা গাছ পাওয়া যায়- আসাম, চীনা ও ক্যামবোয়েড। সাম্প্রতিক শ্রেণিবিভাগে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার তিনটি ভৌগোলিক অঞ্চল অনুযায়ী চাষকৃত চায়ের তিনটি জাত হলো- আসাম, চীনা ও ইন্দোচায়না।

রবার্ট ব্রুস ১৮৩৪ সালে আসামের উঁচু অঞ্চলে চা গাছের সন্ধান পান যা ভারতে চা শিল্পের ভিত্তিস্থাপন করে। পরবর্তী সময়ে ব্রিটিশরাই এখানে চা বাগান তৈরিতে অগ্রবর্তী ভূমিকা পালন করেন। ধারণা করা হয় বিজ্ঞানী লিনিয়াস তাঁর পূর্বসূরি জর্জ ক্যামেলের নামানুসারে প্রজাতিটির নামকরণ করেন।  


লেখক : মোকারম হোসেন, নিঃসর্গবিদ

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //